ভোলায় ঘরে ঘরে গ্যাসের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:১৯ পিএম, ১৯শে জুলাই ২০২৩
ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস-সংযোগ দেওয়াসহ দাবিতে ভোলার নাগরিক সমাজ মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পরে পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে।
ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন, ভোলা জেলা শাখার আহ্বানে সকাল ৯টা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসতে শুরু করে। তাদের মুখে একই শ্লোগান, ‘ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস চাই। ভোলার গ্যাস ভোলাতেই ব্যবহার করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করতে হবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শেষে ভোলা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তামিম আল ইয়ামিনের হাতে দেওয়া হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানোর অঙ্গীকার করেন। পরে অবস্থানকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে সামনে এসে তাঁদের কর্মসূচি শেষ করেন।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক মুহাম্মদ শওকাত হোসেন, বিশিষ্ট সমাজসেবক বন্ধুজনের প্রধান সম্পাদক মিঞা মোহাম্মদ ইউনুস, নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী, বিজেপি সাধারণ সম্পাদক মোতাসিম বিল্লাহ, শিক্ষক প্রতিনিধি কামরুল আহসান, ইমাম সমিতির নেতা হাফেজ মো. বনি আমিন প্রমুখ।
ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন, ভোলা শাখার পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের জনগণকে বঞ্চিত করে ভোলার গ্যাস ঢাকায় সরবরাহ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া, ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া, ভোলার বিসিক শিল্পনগরীতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া, ভোলাসহ বরিশাল বিভাগের শিল্পাঞ্চলে ও আবাসিক খাতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া এবং ভোলায় গ্যাসভিত্তিক সবুজ শিল্পায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল বাংলাদেশের অনুন্নত বিভাগগুলোর একটি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, খানাভিত্তিক দারির্দ্যের হারের দিক থেকে বরিশালের অবস্থান সর্ব শীর্ষে। শিল্পায়ন না হওয়া, শিল্পায়নের জন্য রেল যোগাযোগ বা গ্যাস-সংযোগ না থাকাসহ নানা কারণে বরিশাল বিভাগের এই অনুন্নত দশা।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তারা বলেন, ভোলার গ্যাস দিয়ে বরিশালসহ অনুন্নত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন দীর্ঘদিনের দাবি। এই গ্যাস দিয়ে বরিশাল ও ভোলার কলকারখানায় ও আবাসিক খাতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ ২০১৮ সালেও প্রধানমন্ত্রী বরিশালে সমাবেশ করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ সেই প্রতিশ্রুতির পুরোপুরি বরখেলাপ করে গত ২১ মে ইন্ট্রাকো কোম্পানির সঙ্গে সরকারের ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়েছে; যার আওতায় দ্রুতই ভোলার গ্যাস ঢাকা, ময়মনসিংহের ভালুকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।
বক্তারা আরও বলেন, ভোলা থেকে উত্তোলিত গ্যাস সঞ্চালন লাইন না থাকায় সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) আকারে পরিবহন করে ঢাকার শিল্পকারখানায় সরবরাহ করবে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি কোম্পানি। প্রথম ধাপে চার-পাঁচ মাসের মধ্যে পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সংকুচিত করে তা ঢাকায় সরবরাহ করা হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এক বছরের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। ইন্ট্রাকো সরকারের কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১৭ টাকায় কিনবে কিন্তু ঢাকার শিল্পাঞ্চলে সরবরাহের সময় ইন্ট্রাকো প্রতি ঘনমিটারের দাম পাবে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা, যা লাভের দিক থেকে যেকোনো সিএনজি স্টেশনের চেয়ে বেশি। ভোলায় গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকার কথা বলে এই চুক্তি করা হচ্ছে অথচ ভোলাসহ বরিশাল বিভাগের শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা না করে ঢাকার শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের এই চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এই চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নকে বহুগুণ পিছিয়ে দেবে।
আরএক্স/