পাঁচবিবিতে গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৫৬ পিএম, ২১শে জুলাই ২০২৩
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে গরুর ল্যাম্পি স্কিন বা এলএসডি নামের একটি ভাইরাস জনিত রোগের ব্যাপক সংক্রমন দেখা দিয়েছে। এ রোগে প্রতিদিন উপজেলার কোথাও না কোথাও মারা যাচ্ছে গরুও বাছুর। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক ও খামারীরা।
কৃষকদের অভিযোগ টাকা দিয়েও মিলছে না এ রোগের সু-চিকিৎসা। আর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, এ রোগের সরকারি ভাবে কোন ভ্যাকসিন না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এজন্য উপজেলা ভেটোনারী সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষনিক উপজেলার কৃষক ও খামারীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮ টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে গরু ও বাছুরের ল্যাম্পি স্কিন রোগ বা এলএসডি রোগের ব্যাপক প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তে সংখ্যা। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
এ রোগে আক্রান্ত হলে গরু ও বাছুর প্রথমে খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং শরীর কাঁপতে শুরু করে। সারা শরীরে দেখা দেয় গুটি যা পরে ফেটে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এতে করে মারা যাচ্ছে গরু। বিশেষ করে দুগ্ধজাত বাছুর।
দিশেহারা কৃষকদের অভিযোগ টাকা দিয়েও মিলছে না এ রোগের সঠিক চিকিৎসা। এমন অবস্থায় গ্রামের পল্লী পশু চিকিৎসকদের চিকিৎসা নিয়ে কৃষক ও খামারীরা তাদের পশুর চিকিৎসা করছে।
অপরদিকে সরকারি ভাবে এ রোগের ভ্যাকসিন আবিস্কার না হওয়ায় বেসরকারী ভাবে আমদানিকৃত ভাকসিনের দাম বেশি হওয়ায় বেশি হওয়াই কৃষক ও খামারীদের নিকট তা ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। অনেকেই টাকার অভাবে সময়মত চিকিৎসা করাতে না পারাই তাদের গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। সে কারণে সরকারী ভাবে এ রোগের ভ্যাকসিন সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন কৃষক ও খামারীরা।
আরও পড়ুন: ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু
উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের বাগুয়ান গ্রামের আদিবাসী শ্রীমতি রত্না রাণী বলেন, আমরা দুধ খাওয়ার জন্য বাড়ীতে গাভী পালন করি। সন্ধ্যায় গরু বাছুরকে খাওয়ানোর পরে রাতে গোয়ালে রাখার পর সকালে দেখি বাছুরটি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে কাঁপতে শুরু করেছে। শরীর ফুলে গুটি গুটি হয়েছে।
একই গ্রামের শ্রীমতি সান্তনা রানী জানায়, তার ৭০/৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি উন্নত জাতের বাছুরের চামড়ায় প্রথমে গুটি গুটি বের হয়ে ফোসকা পড়ে। এবস্থায় স্থানীয় পল্লী পশু চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসাসহ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে যান। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। শরীরের চামড়া পচে খসে পড়ে ১০/১২ দিনের পর মারা যায়।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লাম্পি স্কিন ডিজিজ মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে। ধরন তিনটি হলো ক্যাপ্রি পক্স, এলএসডি এবং গোট পক্স। বর্তমানে এ উপজেলায় এলএসডি ভাইরাসের ব্যাপক প্রভাব দেখা দিয়েছে। মশামাছির মাধ্যমে, আক্রান্ত গরুর লালা খাবারে মিশে এবং গরুর পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়ের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াই। ভাইরাসটির ছড়ানোর হার শতকরা ৫০% এবং আক্রান্ত গরুর মৃত্যুর হার ৫% থেকে ১০% পর্যন্ত বলে জানায়।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নিয়ায কাযমির বলেন, উপজেলায় ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত গরুর কৃষক ও খামারীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে উপজেলা ভেটেনারী সার্জন ডা. ফয়সল রাব্বীর নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করেছি। তারা সার্বক্ষণিক উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষক ও খামারীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। সরকারি ভাবে এ রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় গোট পক্স প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি কৃষক ও খামারীদের আতঙ্কিত না হয়ে গোয়াল ঘরে নেপথিনের ব্যবহার ও আক্রান্ত গরুকে সুস্থ গরু থেকে আলাদা করে এবং মশারির মধ্যে রাখার পরামর্শ দেন।
জেবি/ আরএইচ/