চাল রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার শঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯:০৮ পিএম, ২১শে জুলাই ২০২৩
বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত বৃহস্পতিবার বাসমতি ব্যতিত সব ধরনের চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চরম মুদ্রাষ্ফীতির আশঙ্কায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
এর ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বিশ্ববাজারে চালের চালান প্রায় অর্ধেক কমে যাবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকার বলেছে, এক মাসে খুচরা চালের দাম ৩ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় বাসমতি বাদে সব চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অপরদিকে বর্ষার ভারী বৃষ্টিতে ফসলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতিও হয়েছে।
বিশ্বের চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি অংশ আসে ভারত থেকে। ফলে তারা রপ্তানি বন্ধ করলে অন্য দেশ থেকেও সরবরাহ কমে যাবে। সেটি হলে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারে মুদ্রাস্ফীতি চরমে।
ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চাল রপ্তানি বন্ধের এ সিদ্ধান্ত ২০ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তবে রপ্তানির উদ্দেশ্যে যেসব প্রক্রিয়া চলমান, তা ৩১ আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারতীয় বাজারে নন-বাসমতি সাদা চালের পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হ্রাস করতে ভারত সরকার রপ্তানি নীতি সংশোধন করেছে। ইতোমধ্যে ১২ মাসে খুচরা মূল্য ১১.৫ শতাংশ বেড়েছে।
গত বছর মোট ২২ মিলিয়ন টন ভারতীয় চাল রপ্তানির মধ্যে প্রায় ১০ মিলিয়ন টনই ছিল অ-বাসমতি সাদা এবং ভাঙ্গা চাল। সরকার বৃহস্পতিবার বলেছে, ২০২২ সালে ৭৪ লাখ টন আধা সিদ্ধ চাল রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছরও এই ক্যাটাগরির চাল নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।
আরও পড়ুন: ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৬ লাখ মেট্রিক টন গম কিনবে সরকার
রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী বছর ভারতে লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই খাদ্যের মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল হিসেবে চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে চাল রপ্তানি সীমাবদ্ধ করার পর গম রপ্তানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছিল তারা।
রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বিভি কৃষ্ণা রাও রয়টার্সকে বলেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে গমের বাজারে ইউক্রেনের তুলনায় ভারত বিশ্বব্যাপী চালের বাজারকে অনেক বেশি গতিতে ব্যাহত করবে।’
রাও আরও বলেছেন, ‘রপ্তানির ওপর হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা ক্রেতাদের জন্য খুব বেদনাদায়ক হবে। বিশেষ করে যারা অন্য কোন দেশ থেকে বিকল্প চালান আনতে পারবে না তাদের জন্য। যদিও থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের ঘাটতি পূরণের জন্য পর্যাপ্ত ইনভেন্টরি নেই, আফ্রিকান ক্রেতারা ভারতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে। অনেক দেশ দিল্লিকে শিপমেন্ট পুনরায় শুরু করার জন্য অনুরোধ করবে। ভারতীয় চালের অন্যান্য শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে বেনিন, সেনেগাল, আইভরি কোস্ট, টোগো, গিনি, বাংলাদেশ এবং নেপাল।’
জেবি/ আরএইচ/